শিরোনাম
জ্বলছে সুন্দরবন, আগুন নেভাতে ভোরের অপেক্ষা যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ জয় দিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু বাংলাদেশের ইউরোপে তিন বছরে ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড যে গ্রামের বাসিন্দারা প্লেনে চড়েই অফিস-বাজারে যান! টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর দক্ষিণ ব্রাজিলে ৮০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 21 February, 2018 10:27

আমি বাংলার গান গাই

আমি বাংলার গান গাই
রিফাত নওরিন :

দীর্ঘ চার বছর মেক্সিকো দেশটিতে ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন সংস্কৃতিতে জীবনযাপন করে চার বছর আগে আমরা আমেরিকায় আসি। স্কিল ক্যাটাগরিতে আমার স্বামীর পাওয়া কর্মসূত্রে। বড় ছেলে ততদিনে স্প্যানিশে কথা বলা শিখে ফেলেছিল।
নতুন আমেরিকায় এলাম। তখন ক্যানসাসে থাকতাম আমরা। তাই অনেক বাঙালি পরিবারের সঙ্গে দাওয়াত-যোগাযোগ বেড়েই চলল। সেখানে দেখতাম জন্মসূত্রে আমেরিকান হওয়ায় বাচ্চাগুলো আর বাংলায় কথা বলতে পারত না। এমনকি তাদের খাবার তালিকাতেও ভর্তি থাকত পিৎজা-বার্গারে।
আমার বাচ্চা অন্য দেশ থেকে আসায় তাদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করত। বাচ্চাগুলো ভীষণ হাসাহাসি করত তার বাংলায় কথা বলা নিয়ে। সে খুব বিব্রত বোধ করত এতে।
এরপর আমার ছেলে স্কুলে যাওয়া শুরু করল। তার জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাষায় কথা শুরু করতে লেগেছিল মাত্র তিন মাস।
আলহামদুলিল্লাহ তিন মাসেই সে শুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করল। 
এদিকে স্কুলে পড়াশোনায় যখন সে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তাকে অতিকষ্টে শেখানো বাংলা বর্ণমালা ভুলে যেতে শুরু করে। কিন্তু বাসায় তবুও আমার চেষ্টা থাকত কথোপকথন যেন বাংলায় বলে আমার বাচ্চারা।
মোটামুটি এভাবেই চলছিল আমাদের জীবনযাপন। বাংলা কার্টুন, বাংলা ছড়াগান এই সবের অভ্যাস করাচ্ছিলাম আমি আস্তে আস্তে। যাতে নিজের ভাষাটার চর্চা থাকে।
এর মধ্যে দেশে গেলাম গত বছর। সবাই শুধু আমার বাচ্চাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কীভাবে তারা বাংলা বোঝে, কীভাবে কথা বলে সবাই মুগ্ধ। হ্যাঁ, তারা খুব শুদ্ধ করে বলতে না পারলেও বলতে তো পারত। আমার বাচ্চাদের তাদের কাজিনদের সঙ্গে মিশে যেতে দুটো দিনও লাগেনি।
যখন দেখলাম দেশে অনেকটা দিন থাকতে হবে, আমিও তখন ভাবলাম এই সুযোগটা কাজে লাগাই।
নিজের বাবার বাড়ি, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি—সব যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। শ্বশুরবাড়িতে বাচ্চাদের জন্য আরবি পড়ানোর হুজুর রাখলাম। আর নিজে বর্ণমালা থেকে আবার বাংলা পড়ানো শুরু করলাম।
ইংরেজি পুরোপুরি বাদ দিয়েছিলাম তাদের জন্য। বাতিঘর থেকে অনেক অনেক বই কিনেছি বাংলা বর্ণমালার বই, ছোট গল্প পড়ার বই আরও বহু কিছু। শুধু ভাবতাম যেভাবেই হোক একটু যেন বাংলা পড়া শিখতে পারে।
যারা দেশের বাইরে থাকে না তারা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না বাচ্চাদের নিজের ভাষা বুঝতে পারা আর পড়তে পারা কতটা কষ্টের।
আমার বড় ছেলে যেদিন বাংলায় আমাকে ছোটগল্প পড়ে শোনাল আমি কী যে খুশি হয়েছিলাম, যেটা প্রথম সে যখন ইংরেজিতে অথবা স্প্যানিশে কথা বললেও লাগেনি।
আমাকে দেশে যখন সবাই বলত কেন এত জোর দিচ্ছি বাংলায়, সে তো আর এই দেশে থাকবে না।
আমি তাদের একটা উত্তরই দিতাম—বাচ্চারা বাংলা ভাষায় সাহিত্য উপন্যাস লিখবে, এটুকু না হলেও যেন ভাষার চর্চাটা তাদের থাকে। আমাদের ভাষার যে গৌরবজনক ইতিহাস তা যেন আমার বাচ্চারা জানে সেই চেষ্টাটুকু করে যাব আজীবন।
তাই বলব, দেশে থেকেও যেসব মায়েরা বাচ্চাদের ইংরেজি বলা, ইংরেজি পড়া নিয়ে গর্ববোধ করেন, তারা যেন বাংলা পড়ানোর চর্চাটাও রাখেন।
প্রবাসী মায়েদেরও বলব নিয়ম করে প্রতিদিন না হোক, সপ্তাহে দুটো দিন যেন বাংলা পড়ানো হোক।
বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলাদেশ আমার দেশ।
পরবাসী হয়েও যেন এই দ্বীপ-শিখাটি সন্তানদের মাঝে জ্বালিয়ে যেতে পারি এই প্রার্থনাই করি আমি এখন।

রিফাত নওরিন: আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র।

..............সূত্র : প্রথমআলো

উপরে