শিরোনাম
জ্বলছে সুন্দরবন, আগুন নেভাতে ভোরের অপেক্ষা যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ জয় দিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু বাংলাদেশের ইউরোপে তিন বছরে ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী শিশু নিখোঁজ পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড যে গ্রামের বাসিন্দারা প্লেনে চড়েই অফিস-বাজারে যান! টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর দক্ষিণ ব্রাজিলে ৮০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 10 August, 2018 02:33

যে দেশে রাস্তার রাজা জনগণ

যে দেশে রাস্তার রাজা জনগণ
শাফিনেওয়াজ শিপু :

যখনই পুলিশের গাড়ি বা অ্যাস্বুলেন্স দেখি রাস্তায়, তখনই মাথায় অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। কিন্তু প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর খুঁজে পাই না, কেনো জানেন?

কারণ, আমাদের দেশে নিয়মগুলো সঠিক পথে না ঘুরে উল্টো পথে ঘুরে। যার ফলে বরাবরই ভোগান্তির শিকার হয় জনগণ। কিন্তু দেখুন, এই দেশের ক্ষেত্রে একেবারে অন্যরকম চিত্র দেখা যায়।

প্রত্যেকটি কাজকর্ম ও নিয়ম ঘড়ির কাঁটার মতো চলছে সঠিক পথে, সঠিক নিয়মে। এমনকি কেউ কারও কাজে বাধা না দিয়ে কিংবা জনগণের ক্ষতি না করে বরং সঠিক সময়ে সেবা পৌঁছে যাচ্ছে দ্বারপ্রান্তে, যা আমার দেশে দেখা যায় না।

বিলেতে পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরী গাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তাকে ফাঁকা করে দিতে হয়, যাতে করে সঠিক সময়ে তারা সেবা দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে পুলিশের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স নয়, বরং সরকার প্রধানদের গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তাকে ফাঁকা করে দিতে হয়। যতো উল্টো নিয়ম সব আমাদের দেশেই দেখা যায়।     

 জানেন, প্রথম দিকে খুব বিরক্ত হতাম সারাক্ষণ পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সের গাড়ির হর্ন শুনে। কিন্তু এখন আর খারাপ লাগে না। কারণ, যখন মনে হয়, এরাই তো জনগণের বন্ধু।

আমরা সবাই জানি, বিলেতের জীবনযাপন যান্ত্রিক হলেও কেনো জানি একটা ম্যাজিক কাজ করে এইদেশে থাকার। যদিও সবসময় ঘড়ির কাঁটার মতো জীবনযাপন চলে। কিন্তু তারপরও ভালো লাগার বিষয়টি চলে আসে এবং  এই ভালো লাগার পেছনেও অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

এ দেশের নিয়মকানুন, মানুষদের আচার-আচরণ ও নিরাপত্তা- এই তিনটি জিনিসই যেকোনো মানুষকে তখন এই দেশের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিতে সাহায্য করে। আমরা কি পারি না আমাদের দেশটাও এভাবে তৈরি করতে?

পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার ব্রিগ্রেডের গাড়ি কিংবা জরুরী সার্ভিস দেওয়ার জন্য রাস্তা ফাঁকা করে দেওয়া দরকার আমাদের দেশেও, যাতে করে জনগণ প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কিন্তু দেখুন, সব সময় তার উল্টো চিত্র দেখতে পাই।

সরকার বা বিরোধী দলের গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা ব্লক করা হয় এদেশে, কি হাস্যকর নিয়ম! পৃথিবীর কোনো দেশেই এ ধরনের নিয়ম নেই মনে হয়। এর ফলে যে বিশাল ভোগান্তির শিকার হয় জনগণ, সে চিন্তাটুকু কোনো দলের সদস্যদের মাথায় আসে না।

আগে ভাবতাম, নিশ্চয়ই নেতাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এর ফলে যে জনগণের ক্ষতি হচ্ছে, সেটাও তো দেখা উচিত। বলতে গেলে, এখন এটি একটি নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আমি তো ইংল্যান্ডে আসার পর এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো নিয়ম দেখিনি যেখানে সরকারের গাড়িকে চলাচলের জন্য রাস্তা ব্লক করে রাখতে হবে।

 এই দেশে এসে দেখি অন্যরকম সিস্টেম, যা আপনাকে মুগ্ধ ও অবাক করবে। পুলিশের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স বা জরুরী গাড়ি যখন রাস্তা দিয়ে যায়, উল্টো জনগণ তখন রাস্তা ছেড়ে দেয়, যাতে করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছে গিয়ে সেবা বা সার্ভিস দিতে পারে।

একবার আমার এক আত্মীয় অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন ৯৯৯-এ কল দেওয়া হয়েছিলো। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স হাজির হলো ডাক্তারসহ। তাদের সার্ভিস ও সেবা দেখে এতোটাই অবাক হয়েছিলাম যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

আর তখনই দেশের কথা মনে পড়ে গেলো। আজকে যদি আমাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটতো, রাস্তায় আটকে থেকে হয়তো রোগী মরে যেত এই রকম উল্টো নিয়মের কারণে। শুধু কি তাই, এই উল্টো নিয়মের কারণে আজকে থমকে যাচ্ছে মানুষের জনজীবন। সরকার প্রধানদের বোঝা উচিত, রাস্তার রাজা সরকার নয় বরং জনগণ।

তাছাড়া, তারা তো জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। তাহলে তো সরকারের উচিত জনগণের স্বার্থে কাজ করা। কিন্তু দেখুন, আমরা এর পরিবর্তে কী দেখছি?

এই দেশে আসার পর বুঝলাম, জনগণ হচ্ছে দেশের রাজা, বিপদে পড়লে সেবা পেতে বাধ্য। এখন আর বুঝতে বাকি নেই যে এতো কষ্টের জীবনযাপনের মধ্যেও কেনো মানুষ এইদেশে সুখ খুঁজে পায়।      

 

লেখক: লন্ডন প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী  

(সূত্র: বিডিনিউজ)



[প্রিয় পাঠক, নিউইয়র্ক মেইল যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত সর্বাধিক প্রচারিত  বাংলা অনলাইন পোর্টাল। এই অনলাইনের ‘প্রবাসের চিঠি’ বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। আপনি এবং মায়ের ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।
প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]

উপরে