শিরোনাম
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় হাইতির চেয়ে কম ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র জয় দিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু বাংলাদেশের হাঙ্গেরিকে ইউরোপীয় আদালতের ২০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা পদত্যাগ করলেন মোদী, শপথ নিতে পারেন শনিবার সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড যে গ্রামের বাসিন্দারা প্লেনে চড়েই অফিস-বাজারে যান! টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর মিয়ানমারের সিত্তে শহরের আশপাশের গ্রাম খালি করার নির্দেশ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 1 March, 2018 22:52

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নতুন আতঙ্ক

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নতুন আতঙ্ক
ঢাকা অফিস :

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখার বিপরীতে ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) অতিরিক্ত সৈন্য ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে দেশটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। একই সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ কে ডেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। সব মিলিয়ে দু’দেশের সীমান্তে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার বিপরীতে ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। 

এরপরে বিজিপি মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের শূন্যরেখা থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়ায় শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাত ৮টার দিকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কড়া সর্তক অবস্থানসহ নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে বান্দরবানের পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বিজিবি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৯১তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মিয়ানমারে সীমান্তে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে বিজিবি কঠোর জবাব দেবে।বাংলাদেশের ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। সীমান্তের নিরাপত্তায় বিজিবি সর্বদা সতর্ক অবস্থায় পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে।

সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজিবি অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা দেশকে ভালোবাসে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্ত লঙ্ঘন করলে কিংবা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলে বিজিবি কঠোর জবাব দেবে। বিজিবির সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছে।

আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘মিয়ানমার অহেতুক সমরাস্ত্র প্রদর্শন করেছে। আপনারা দেখেছেন মিয়ানমার মুখে যা বলে তা বাস্তবায়ন করে কম। তারপরও বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’

এরই মধ্যে, সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি এলাকায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে বিজিপির কাছে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিজিবি।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের হুমকিদান এবং অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করা হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান। তবে এ নিয়ে সীমান্তে আপাতত কোনো ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখছেন না বলে জানান তিনি।

সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ও সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের রবাত দিয়ে লে. কর্নেল মঞ্জুরুল বলেন, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলার ঘটনার পর থেকে দেশটি থেকে পালিয়ে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছে অন্তত সাত হাজারের কাছাকাছি রোহিঙ্গা। শূন্যরেখা থেকে সরে যেতে মিয়ানমারের বিজিপি গত ফেব্রুয়ারির প্রথমদিক থেকে মাইকিংসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালেও তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পের কাছাকাছি বিপরীতে এসে মিয়ানমারের বিজিপি রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়। এরপর কয়েক ঘণ্টা অন্তর মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের সেখান (শূন্যরেখা) থেকে যাওয়ার নির্দেশনা প্রচার চালাচ্ছে।

বিজিবির অধিনায়ক বলেন, ‘এদিকে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি প্রদানের পাশাপাশি তমব্রু সীমান্তের ক্যাম্পটির বিপরীতে মিয়ানমার অভ্যন্তরে বিজিপি অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গারাও জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বিজিপির কয়েকেটি গাড়ি করে বেশ কিছু সৈন্য মোতায়েন করতে দেখেছে। এতে অন্তত দুই শতাধিক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে থেকেও শূন্যরেখার ক্যাম্পটির সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আরো দুই শতাধিক সীমান্তরক্ষী মোতায়েন ছিল।’

এ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান মঞ্জুরুল।

‘তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে এবং বিকেলে বিজিপির কাছে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এখনো কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি।’

বিজিবি অধিনায়ক বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কড়া সতর্ক অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে নজরদারিও। তারপরও এ নিয়ে সীমান্তে আপাতত কোনো ধরনের উত্তেজনার আশঙ্কা করছি না।

শূন্যরেখার ক্যাম্পটির ব্লকভিত্তিক মাঝি (প্রতিনিধি) মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বিজিপির ৭/৮টি ট্রাকে করে বেশ কিছু সৈন্য মোতায়েন করতে দেখা গেছে। প্রতি গাড়িতে ২০/২৫ জন করে অন্তত দুই শতাধিক সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এসব সৈন্য শূন্যরেখার ক্যাম্পটির সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অবস্থান করছে।

‘বৃহস্পতিবার সকালে শূন্যরেখার ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে বিজিপির সৈন্যরা অস্ত্র তাক করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেয়। এমনকি বিজিপির সৈন্যরা সীমান্তের কাঁটাতারের ওপর মই দিয়ে শূন্যরেখার ক্যাম্পে প্রবেশ করে হামলারও চেষ্টা চালায়। এ সময় মিয়ানমার অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পাহাড়ে ভারী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিজিপির সৈন্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তবে দুপুর ২টার পর বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থানের কারণে বিজিপি এসব ভারী অস্ত্র-শস্ত্র সরিয়ে নিয়েছে।’

সীমান্তে বিজিপির অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ এবং নতুন করে আবারো রোহিঙ্গাদের শূন্যরেখা থেকে সরে যেতে হুমকি দেওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে জানান মাঝি আরিফ।

‘গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো তুমব্রু সীমান্তে এসে রোহিঙ্গাদের অন্যত্রে সরে যেতে নির্দেশনার পর থেকে এই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এরপর থেকে প্রতিদিনই মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে নির্দেশনা প্রচার করলেও গত ২০ ফেব্রুয়ারি উভয় দেশের প্রতিনিধি দল শূন্যরেখার ক্যাম্পটি পরিদর্শনের পর প্রচারণা বন্ধ ছিল।’

শূন্যরেখার এসব রোহিঙ্গা এখন না পারছে বাংলাদেশে ঢুকতে, না পারছে মিয়ানমার ফিরতে; ফলে আতঙ্কেই কাটছে তাদের জীবন- জানান ক্যাম্প মাঝি আরিফ।

একই ধরনের তথ্য জানালেন তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির ব্লকভিত্তিক মাঝি নুর মোহাম্মদ, শফিউল আলম ও মো. আয়ুব।

শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিজিপির হুমকি প্রদান এবং অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশের পর থেকে তমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

তমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা করিম উল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে বিজিপি হুমকি প্রদান করেছে। এরপর থেকে কয়েক ঘণ্টা অন্তর মাইকিং করে সরে যাওয়ার নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। সকালে ৭/৮টি ট্রাকে করে এসে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে বিজিপির সৈন্যদের ভারী অস্ত্র-শস্ত্রসহ টহল এবং অবস্থান নিতে দেখা দেখা গেছে।

এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। একই কথা জানালেন তমব্রু বাজার পাড়ার জহিরুল কাদের।

তিনি বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো তমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেন। তিনি শূন্যরেখার ক্যাম্পটির কাছে এসে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।

 

 


নিউইয়র্ক মেইল/বাংলাদেশ/১ মার্চ ২০১৮/এইচএম

উপরে