চকবাজারে ভয়াবহ আগুন, নিহত ৬৯

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ভবনে ভয়াল অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ওই ভবনে বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। এই অগ্নিকান্ডে এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে।
জানা যায়, যে ভবনে প্রথম আগুন লাগে তার নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণের দোকান ছিল। ভবনটির পাশের ওয়াহিদ মঞ্জিল, আমানিয়া হোটেল, রাজ হোটেল এবং উল্টো পাশের চারটি বাসায় আগুন ছড়ায়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ১৫ ঘণ্টা পর দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভেছে বলে ঘোষণা আসে ফায়ার সার্ভিসের। তার আধা ঘণ্টা পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণার সময় মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, রাসায়নিকের গুদামগুলো সরাতে তারা এখন জোর পদক্ষেপ নেবেন। তার আগে সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই ঘটনায় ‘শিক্ষা’ হয়েছে, এখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, কলেজ ও হাসপাতালের দুই মর্গে মরদেহ রাখা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৬৭টি ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ব্যাগেই রয়েছে একাধিক মরদেহ। সব মিলিয়ে এসব ব্যাগ থেকে পাওয়া বেশিরভাগ মরদেহ রাখা হয়েছে ঢামেক মর্গে। এর বাইরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে ১১টি মরদেহ।
ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘যে মরদেহ আমরা পেয়েছি, এর মধ্যে ৩৫টি মরদেহ বর্তমান অবস্থাতেই শনাক্ত করা যাবে। বাকি মরদেহগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে সেগুলো সরাসরি শনাক্ত করার অবস্থায় নেই। সেগুলোকে ফিংগারপ্রিন্ট বা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে।’
এদিকে মরদেহের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঢামেকে সেগুলোর স্থান সংকুলান সম্ভব হবে না বলে জানান ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মর্গে ১২টি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ১০টি ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ছয়টি মরদেহ পাঠানো যাবে। এর বাইরে অন্য হাসপাতালগুলোতেও যতগুলো সম্ভব মরদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেগুলো শনাক্তের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অন্তত ৪০ জন। এর মধ্যে বার্ন ইউনিটে আছেন নয়জন, তার মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। আগুনে চকবাজার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশের অন্তত পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনে বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি ছিল রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও প্রসাধন সামগ্রীর গুদাম।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ভবনটিতে প্রথমে আগুন লাগে, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি, পেছনের একটি এবং সরু গলির বিপরীত পাশের দুটি ভবনে। আগুন লাগার পরপরই চার তলা ভবনটির সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়। আগুনের সময় রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন লেগে ভবনে ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর ১০টি ইউনিট সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা ৩৭টিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে কর্মীর সংখ্যা ছিলো ২০০ জন।
এর বাইরে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি হেলিকপ্টার নিয়ে বিমানবাহিনীও যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে।