শিরোনাম
পাকিস্তানের কাছে ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার ন্যায্য হিস্যা চাইলো বাংলাদেশ গ্রিনকার্ডধারীদের জন্য নতুন সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্রের গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত ট্রান্সজেন্ডাররা নয়, শুধু জন্মগত নারীরাই নারী: ব্রিটিশ আদালতের রায় ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে উত্তাল কলকাতা দক্ষিণী নির্মাতার হাত ধরে খলনায়ক হয়ে ফিরছেন শাহরুখ ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ডোমিনিকায় নাইটক্লাবের ছাদ ধসে নিহত বেড়ে ৯৮ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 26 March, 2019 03:40

আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস
ঢাকা অফিস :

‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েই শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পথে আমাদের পথচলা। আজকের দিনটি তাই বাঙালি জাতির জন্য এক গৌরব ও অহঙ্কারের। সবকিছু ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়ার দিন। 

একই সঙ্গে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যেসব বাঙালি তাদের প্রাণ আত্মাহুতি দিয়েছেন, যেসব মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন। আজ সেই মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।

তবে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে- স্বাধীনতার সরাসরি ঘোষণা আসে ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর। রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পিলখানা, রাজারবাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলার পর রাত পৌনে ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে তার ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন।

মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতি আজ ৪৯তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে। আজ সমগ্র জাতি আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হবে।

ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ দেশের সব স্মৃতির মিনার। দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরও অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সব সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ২৬ মার্চ বাঙালির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এদিকে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। এ সময় সারা দেশে একযোগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভব হলে একই সময়ে এবং অন্যরা একইদিনে সুবিধাজনক সময়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করবে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।

সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোতে বৃহদাকারের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে।

ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌপথে বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে।

শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।

এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশুদিবা যত্ন কেন্দ্রগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ বিকাল ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে সকালে কুচকাওয়াজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ দু’দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- আজ ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

এছাড়া আগামীকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।

উপরে