বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র পেয়েছে ৫ লাখ রোহিঙ্গা

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার থেকে: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া পাঁচ লাখের বেশী রোহিঙ্গা বায়োমেট্রিক পদ্দতিতে তৈরী পরিচয়পত্র পেয়েছে। তারা বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর কর্তৃক যৌথভাবে নিবন্ধিত হয়েছে।
বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত এ পরিচয়পত্রটি নকল বা জাল করা সম্ভব নয় এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারি ১২ বছরে অধিক বয়সী তথ্য যাচাই করা সকল মিয়ানমার নাগরিককে এ পরিচয়পত্র প্রদান করা হচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর বলছে, এটিই কোন কোন রোহিঙ্গার ক্ষেত্রে জীবনের প্রথম পরিচয়পত্র প্রাপ্তি। পরিচয়পত্রটি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহায়তার পাশাপাশি আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউএনএইচসিআর এর মিডিয়া কমিউনিকেশন অফিসার জোসেফ ত্রিপুরা নিউ ইয়র্ক মেইলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনএইচসিআর এর তথ্য মতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ৯ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশী রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেয়। এসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর কর্তৃক যৌথভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম করার উদ্যোগ নেয়। এতে বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত এ পরিচয়পত্রের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে।
বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পে স্থাপিত ৭ টি কেন্দ্রে প্রতিদিন ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত নিবন্ধন করা হচ্ছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে সকল রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রমের আওতায় আনতে ৫৫০ জনেরও বেশী কর্মি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ইউএনএইসিআর এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস এর বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ এটি আমাদের নিবন্ধন কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য একটি মাইফলক। এই কার্ডটি থাকায় নিবন্ধিত শরণার্থীরা আরো নিরাপদ বোধ করবে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা সমূহ গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়াও এই কার্ডে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে যে, তাদের মূল দেশ মিয়ানমার। তারা যখন নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবে, এই কার্ডটি তাদের নিজ দেশে ফেরার অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
“শরণার্থী নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় তাদের মৌলিক তথ্য সহ, পারিবারিক সংযোগ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নথিভূক্ত করা হয়। ইউএনএইচসিআর এর বায়োমেট্রিক পরিচয় ব্যবস্থাপনা পদ্দতি (বিআইএমএস) বায়োমেট্রিক তথ্য, যেমন আঙ্গুলের ছাপ, চোখের মনির স্ক্যানকৃত তথ্য সংরক্ষণ করে; যা প্রত্যেক শরণার্থীর অনন্য পরিচয় নিশ্চিত করবে।”
স্টিভেন করলিস বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীদের সম্পর্কিত তথ্যের যথাযথতা নিশ্চিতের পাশাপাশি জাতীয় কর্তৃপক্ষ এবং মানবিক সংস্থা সমূহকে শরণার্থী জনগোষ্টি এবং তাদের প্রয়োজন সমূহ সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করবে। সঠিক তথ্য ভান্ডার এবং কর্মরত সংস্থাসমূহকে তাদের কর্মসূচী পরিকল্পনা করতে সহায়ক হবে। এছাড়া নারী ও শিশু কর্তৃক পরিচালিত পরিবার এবং প্রতিবন্ধিসহ সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় থাকা মানুষদের জন্য বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করতেও সক্ষম হবে।
জাতিসংঘের এ সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, নিবন্ধনের সময় সংগৃহিত বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার ্ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা স্থাপনায় প্রথমবারের মত গ্লোবাল ডিসট্রিবিউশন টুল (জিডিটি) উদ্বোধন করেছে। আঙ্গুলের ছাপ বা চোখের মনির স্ক্যানকৃত তথ্য যাচাই করার মাধ্যমে এই পদ্দতি ‘সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থাকে’ তরান্বিত করে। এটির নকল বা জাল প্রতিরোধী ব্যবস্থার কারণে সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি ঘটে না। এতে সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে কেউ বাদ পড়ার সম্ভাবনওা থাকে না।
ঈদের পর কক্সবাজারের অন্যান্য রোহিঙ্গা স্থাপনাগুলোতেও ‘গ্লোবাল ডিসট্রিবিউশন টুল’ সিস্টেম স্থাপন করা হবে বলে জানান স্টিভেন করলিস।