
গাজীপুরের টঙ্গীতে শনিবারের তাবলিগ জমাতের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।
সোমবার দুপুরে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া ৬ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপিতে হকপন্থী জোবায়ের অনুসারী মুরব্বিরা ওই অভিযোগ তুলেছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সেদিন পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয়, ওই দিন গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকতে পুলিশ সাদপন্থীদের সহায়তা করেছে। ঘটনা শুরুর আগে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছিল আপনারা ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন আমরা নিরাপত্তা প্রহরায় আছি। বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা গেল ভিন্ন। সরকার জোড় ইজতেমা স্থগিত করার পরও সারা দেশ থেকে হাজার হাজার সাদপন্থী টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে কীভাবে একত্র হলো।
এতে বলা হয়, হামলাকারীরা ভেতরে ঢুকেই যাকে সামনে পেয়েছে তার ওপরই তারা হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শত শত ছাত্র ও সাথীকে রক্তাক্ত করেছে। ওইদিন হামলায় নিহত হয়েছে মুন্সিগঞ্জের ইসমাইল মণ্ডল এবং আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আমির নিযুক্ত না করলেও মাওলানা সাদ নিজেকে তাবলিগের আমির দাবি করেন এবং কোরআন ও সুন্নাবিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন। যাতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ হকপন্থী আলেম সমাজ আপত্তি তুলেন। এসব নিয়ে তাবলিগের দাওয়াতের কাজে মতবিরোধ দেখা দেয়।
এতে বলা হয়, দেওবন্দের আস্থা অর্জন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে সাদের কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এ সিদ্ধান্তের ফলে দাওয়াত তাবলিগের সাথীদের মাঝে বিভক্তি ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তারা তাণ্ডব চালায়।
এর আগে সকালে জেলা শহরে হকপন্থী জোবায়ের অনুসারিরা শনিবার টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং জেলা প্রশাসকের কাছে ৬ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এতে মাওলানা আশেকে মুস্তফা, মুফতি মাসউদুল করীম, মুফতি লেহাজ উদ্দিন ভ‚ইয়া, মুফতি নূরুল ইসলাম, মুফতি আতাউর রহমান, মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ নেতৃত্ব দেন।
৬ দফা দাবি হলো, শনিবারের হামলার নির্দেশদাতা সাদপন্থী ওয়াসিফুল ও শাহাবুদ্দিন নাসিমগংসহ হামলার হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, নিহত ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, টঙ্গী ময়দান এত দিন যেভাবে শুরাভিত্তিক পরিচালিত তাবলিগের সাথী ও ওলামে কেরামের অধীনে ছিল তাদের কাছেই হস্তান্তর করতে হবে, দ্রুত কাকরাইলে সব কার্যকলাপ থেকে ওয়াসিফ ও নাসিমগংকে বহিষ্কার করতে হবে, সারা দেশে ওলামায়ে কেরাম ও শুরাভিত্তিক পরিচালিত তাবলিগ সাথীদের ওপর হামলা ও মামলা বন্ধ করে পূর্ণ নিরাপত্তাব্যবস্থা করতে হবে, টঙ্গীতে আগামী বিশ্বইজতেমা পূর্বঘোষিত ১৮,১৯ ও জানুয়ারি অনুষ্ঠানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. এমদাদুল হক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শনিবার সংঘর্ষের দিন ময়দানের ভেতর থেকেই প্রথমে বাইরে মুসল্লিদের ওপর ঢিল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।