
বিশেষ প্রতিনিধি: কি এমন ভয়ঙ্কর তথ্য ফাঁস করে দিতে চেয়েছিল মিন্নি? কাকে আড়াল করতে এই নতুন নাটক পুলিশের? প্রভাবশালী কাউকে বাঁচাতেই কি পুলিশ সুপার অসহায় এই মেয়েটিকে কিলার বানাতে চাইছে? নাকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাওয়াই কাল হলো অকাল বিধবা মিন্নির ?
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের পর এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে। প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোও।
১৬ জুলাই ১২ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় মিন্নিকে। পুলিশ সুপার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারের কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন রিফাত হত্যায় তার স্ত্রী মিন্নির সংশ্লিষ্ঠতা পাওয়া গেছে। প্রধান সাক্ষী থেকে বুধবার আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ান মিন্নি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের করা আবেদনের শুনানির পর আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে দাঁড়িয়ে মিন্নি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে স্বামী হত্যার বিচার চান।
স্থানীয় এমপির পুত্র অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের হুমকির কারণে কোনো আইনজীবি মিন্নির পক্ষে দাঁড়াতে সাহস পায়নি বলে অভিযোগ করেছে মিন্নির বাবা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মিন্নি পুলিশ সুপারের কাছে রিফাতের প্রধান হত্যাকারী সন্ত্রাসী নয়ন বন্ডের গডফাদার এমপি পুত্রের ব্যাপারে ভয়ঙ্কর কোনো তথ্য দিয়েছে। সেজন্যই মিন্নিকে তড়িঘড়ি করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।
এমপি পুত্রের অনেক কুকর্ম ফাঁস হয়ে যেতে পারে বলে কিলার নয়ন বন্ডকে ক্রস ফায়ার দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে কি এমপি ও পুত্রকে রক্ষা করার জন্যই পুলিশ সুপারের নতুন মিশন।
বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কড়া পুলিশ পাহারায় মিন্নিকে বরগুনার বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মিন্নির কিছু বলার আছে কি না জানতে চান। তখন মিন্নি আদালতের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। একই সঙ্গে বলেন, ‘আমি আমার স্বামী রিফাত হত্যার বিচার চাই।’ এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির মামলার ১২ নম্বর আসামি হৃদয়ের জবানবন্দি পেশ করেন। এতে জানা যায়, আসামি হৃদয় রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নি জড়িত মর্মে জবানবন্দি দিয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তা এ ছাড়া ঘটনার আগে নয়ন বন্ড, রিফাতসহ অন্য আসামিদের সঙ্গে মুঠোফোনে মিন্নির কথোপকথনের ‘কল ডিটেইলস’ পেশ করেন। এসব ব্যাপারে মিন্নির কাছে আদালত জানতে চাইলে তিনি তখন নীরব ছিলেন। পরে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
২৬ জুন স্বামীর সঙ্গে কলেজে গিয়েছিলেন মিন্নি। কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে নির্দোষ। রিফাতকে বাঁচাতে সে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল। যেটা দেশবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন। তারপরও আমার মেয়েকে ফাঁসানো হয়েছে। কারণ আসামিরা প্রভাবশালীদের আত্মীয়-স্বজন। তাদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগসূত্রও রয়েছে। মূলত আসামিদের বাঁচানোর জন্য আমার মেয়েকে ফাঁসানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, রিফাত ফরাজী অন্যতম খুনি। তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সে কোনো তথ্য দেয়নি। এদের বাঁচানোর জন্যই মামলার প্রত্যক্ষদর্শীকে আসামি হিসেবে দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
মিন্নির জন্য আইনজীবী নিয়োগ দিতে না পারা প্রসঙ্গে বাবা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। সাক্ষী থেকে আসামি হওয়ার পরই আমি মিন্নির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করি। রাতেই পরিচিত তিনজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাঁরা তিনজনই মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা মিন্নির পক্ষে আইনি লড়াইয়ে থাকবেন না।’
এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ গত ২৭ জুন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আমরা বরগুনার আইনজীবীরা রিফাত শরীফ হত্যাকারীদের কোনো আইনি সহায়তা দিব না, একজনকেও না।
এ বিষয় নিয়ে ন্যায় বিচারের জন্য মিন্নি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিল। এমনকি দেখা করার জন্য বিভিন্নভাবে যোগযোগের চেষ্টা করছিল। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারলে স্থানীয় এমপি ও তার পুত্রের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যেতে পারে বলেই কি অসহয় মিন্নিকে গ্রেফতার করা হলো ? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।