
আকাশে শুভ্র মেঘমালার ভেলা ভাসিয়ে ঋতুবদলের পালাক্রমে আসে শরৎ। আর এই শরতেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা।
দিকে দিকে কাঁশফুলের শুভ্রতা, মৃদু হিমেল বাতাসের দোলা, পুজ্ঞিভুত শুভ্র মেঘমালার ভেলায়, প্রকৃতির সন্ধিক্ষনে মর্ত্যালোকে অশুভ বিনাশিনী দেবী দূর্গার আগমন ঘটে বলে হিন্দুধর্মলম্বীরা বিশ্বাস করে থাকে।
রামপাল উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার রামপালে ৪১টি পূজা মন্ডপে এবার শারদীয় দূগাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
রামায়ন অনুসারে প্রাগৈতিহাসিক কালে শ্রীরামচন্দ্র এই শরৎকালের আশ্বিন মাসেই দেবী দূর্গার পূজা করেছিলেন বলে তা অকাল বোধন নামেও পরিচিত। আবার পৌরানিক কথা অনুসারে শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামক ভয়ানক দুরাচারী রাক্ষসদের হাত থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা করতে দেবতারা ভগবান ব্রক্ষ্মা ও বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হন। ভগবান বিষ্ণু তাদের কৈলাসে অবস্থানরত শিবের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। এ সময় ত্রিদেব এবং দেবতাদের দেহ হতে নির্গত তেজে দেবী দূর্গা প্রকট হন। এ সময় প্রত্যেক দেবতা তাদের অস্ত্রসস্ত্র দেবীর হাতে প্রদান করে তাকে অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রেরন করেন। কোনো কোনো ধর্মীয় গ্রন্থে দেবী দূর্গার চতুর্ভুজা, অষ্টভূজা এবং অষ্টাদশভুজা রূপে বর্ননা করা হলেও তিনি মূলত দশভুজা রুপেই সার্বজনীনভাবে পূজিত হয়ে থাকেন। কোনো কোনো শাস্ত্রমতে দেবীর এই রূপ রণদূর্গা রূপেই পরিচিত। হিন্দু গুপ্ত তন্ত্রশাস্ত্র অনুসারে দেবী দূর্গা দশ মহাবিদ্যার আধার। অর্থাৎ তার মধ্যে সৃষ্টির গোপন সূত্র বিদ্যমান যা এক রহস্যময় জগত। আর একে কেন্দ্র করেই তন্ত্রসাধকদের এক গুপ্ত জগত গড়ে উঠেছে। তবে শরৎকালের এই তিথিতেই সার্বজনীন ভাবেই দেবী দূর্গার আরাধনা করা হয়।
আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজাকে ঘিরে পূজা মন্ডপে প্রতীমার সাজসজ্জায় ব্যাস্ত মৃৎশিল্পিরা। ৩ অক্টোবর মহাপঞ্চমী পূজার মাধ্যমে সূচনা হবে দেবী পক্ষের এবং ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পূজার সমাপন হবে। তিথি অনুসারে ৬ অক্টোবর মহাষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা ও কুমারী পূজা। বেশ কয়েকটি মন্দিরের পূজা আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, পূজাকে ঘিরে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করছে। নির্বিঘ্ন পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশের পাশাপাশি ভলান্টিয়াররা কাজ করবে।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল জানান, রামপালের ১০টি ইউনিয়নের ৩৮টি মন্ডপ সার্বজনীন এবং ৩টি মন্ডপে ব্যাক্তিগত পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। আমরা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ, রামপাল থানা এবং সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। সরকারী অনুদানের জন্য চাহিদা প্রেরন করা হয়েছে, অনুদান হাতে পেলেই তা পুজামন্ডপগুলোকে দেয়া হবে।
রামপাল থানার ওসি মো. তুহিন হাওলাদার জানান, পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা সতর্ক অবস্থানে আছে । বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টিকারী কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা বলে জানান তিনি।
নিউইয়র্ক মেইল/বাগেরহাট/১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯/অমিত পাল/এইচএম