শিরোনাম
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় হাইতির চেয়ে কম ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র জয় দিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু বাংলাদেশের হাঙ্গেরিকে ইউরোপীয় আদালতের ২০০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা পদত্যাগ করলেন মোদী, শপথ নিতে পারেন শনিবার সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড যে গ্রামের বাসিন্দারা প্লেনে চড়েই অফিস-বাজারে যান! টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর মিয়ানমারের সিত্তে শহরের আশপাশের গ্রাম খালি করার নির্দেশ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 13 March, 2018 12:20
গল্প

নাজু’র অনিশ্চিত যাত্রা - মুর্শিদা মুন্নী

নাজু’র অনিশ্চিত যাত্রা - মুর্শিদা মুন্নী

নাজু শহরে এসেছে কয়েক বছর হলো।একান্ত বাধ্য হয়েই শহরে আসা।দেখতে অপূর্ব সুন্দরী না হলেও মনকাড়া চেহারা আর গড়ন। গাঁয়ের ছেলে মজিদের সঙ্গে বিয়ের পর কিছুদিন সুখেই ছিলো।মজিদ গ্রামের বাজারে এক আড়তে কাজ করত।

কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামের চেয়ারম্যানের দুঃশ্চরিত্র ছেলের নজরে পড়ল।নানান ছল ছুতোয় মজিদের বাড়িতে চেয়ারম্যানের ছেলের আনাগোনা শুরু হলো।শেষে ওপাড়ার আমেনার পরামর্শে নাজু গ্রাম ছেড়ে শহরে পা বাড়ায় ।শহরে এসে কিছুদিন মজিদ রিকশা চালিয়েছে আর নাজু বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছে।

ইতিমধ্যেই মেয়ে টুনির জন্ম হলো।মজিদ ও মন দিয়েই সংসার চালাচ্ছিলো।মাঝখানে জন্ডিস হওয়াতে মজিদের শরীর ভেঙ্গে পড়েছে।দুর্বল শরীরে রিকশা চালাতে কষ্ট হয় ।নাজু টুনিকে মজিদের কাছে রেখে কাজে যায় আবার ঘরে ফিরে রান্না বান্না টুকটাক কাজ করে।কিন্তু একা নাজুর টাকায় সংসার চলে না।তাছাড়া মজিদের অসুখের সময় গ্রামের এক মহাজনের কাছ থেকে সুদে দশ হাজার টাকাও ধার করেছে ।প্রতি মাসে সেখানেও টাকা দিতে হয়।

এক সময় মজিদ আর শহরে থাকতে চাইলো না।একদিন বললো নাজু চল গ্রামে ফিরা যাই।নাজুর মনে পড়লো চেয়ারম্যানের লম্পট ছেলেটির কথা।কিছুদিন চাপাচাপি করে মজিদ একাই গ্রামে ফিরে গেলো।শুরু হলো নাজুর একার সংগ্রাম।বাচ্চাটিকে বাসার বারান্দায় রেখে নাজু ঝিয়ের কাজ করে।যে বাসায় কাজ করে সে বাসার ম্যাডামের মেয়ে স্কুলে যায় ।দেখে নাজুও মনে মনে স্বপ্ন দেখে ।টুনি স্কুলে পড়বে।টুনি লেখাপড়া শিখে অফিসে চাকুরী করবে।বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ টুনি করবে না।

সংসারের সব খরচ থেকে অল্প অল্প করে টাকা সরিয়ে রাখে নাজু।একদিন সুযোগ পেয়ে বাসার মেডামের সঙ্গে কথা বলে।
মেডাম আমার টুনিরে লেহাপড়া করাইতে চাই ।কই যাইতে হইব কি করতে হইবো কিছুই তো জানি না।
মেডাম বলেন টুনির বয়স কত ? 
নাজু উত্তর দেয় ঠিক হিসাব নাই মেডাম তয় চাইর পাচ তো হইবো।
মেডাম বলেন ঠিক আছে আমি ড্রাইভার হাফিজকে বলে দেবো সে এই এলাকার প্রাইমারী স্কুলে ভর্তির খোঁজ খবর নিয়ে আসবে।আর তোর মেয়েকে পড়ানোর জন্য মাসে মাসে কিছু টাকা আমিও দেবো।শুনে নাজু মনে মনে অনেক খুশি হলো।ভাবলো স্বপ্ন তাহলে সত্যি হওয়ার পথে।
কাজ শেষে নাজু তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরে।জমানো টাকা গুলো বের করে গুনে দেখে দু'হাজার এর কিছু বেশি ।মনে মনে হিসেব করলো স্কুলের জামা ,জুতা আর ও কত কি লাগবে ।এই টাকায় হয়ত হবে না।এই মাসে বেতনের কিছু টাকা খরচ করতে হবে।
কয়েকদিন পর মেডামের বাসার ড্রাইভার হাফিজ নাজু এবং টুনিকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করে দিলো।মেডাম অনেক সাহায্যও করলেন।মেয়ের পুরোনো জুতো,স্কুল ব্যাগ এসব দিয়েও এক হাজার টাকাও সঙ্গে দিলেন।নাজু হিসেব করে দেখলো ওর তেমন কোন টাকাই খরচ হয়নি।যাই হোক টুনি স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলো।এখন নিয়মিত স্কুলে পাঠাবে আর নিজে মন দিয়ে কাজ করবে।

কিছুদিন পর মজিদ আসলো।গ্রামের মহাজনের টাকার জন্য চাপাচাপি সইতে না পেরে বঊয়ের কাছে আসলো ।নাজু জানতে চাইলো মজিদ নিজের টাকা কি করেছে ? গ্রামে সে কোন কাজ করেছে কি না? মজিদ সে সবের তেমন কোন জবাব দেয় না।শুধু নাজু কাজে চলে গেলে ঘরের সব জিনিসপত্র হাতড়ে বেড়ায় ।একসময় পেয়েও যায়।কাউকে কিছু না বলে নাজুর জমানো টাকা নিয়ে মজিদ গ্রামে চলে যায় ।

নাজু কিছুক্ষন একা একাই কান্নাকাটি করে ।একসময় চোখ মুছে সংসারের কাজে মন দেয়।
বিকেলে গ্রামের এক চাচীর সঙ্গে নাজুর দেখা হলো।সবার কথা জানতে চায় নাজু।অনেক কথা হয় ।একসময় চাচী জিজ্ঞেস করে মজিদ তোর কাছে ক্যান আসে ? নাজু অবাক হয়ে প্রশ্ন করে এইটা ক্যামুন কথা কইলা চাচী ? সে তো টুনির বাপ আইবো না?
চাচী বলল তাইলে জাহেদারে আবার বিয়া করছে ক্যান জিগাইলি না?

নাজুর চোখ অন্ধকার হয়ে আসলো কথা শুনে।বুঝলো তার সর্বনাশ হয়েছে । কিছু বুঝে উঠার আগেই নাজু চাচির গায়ে ঢলে পড়লো।কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে ঘরে এনে মাথায় পানি ঢালার পর নাজুর জ্ঞ্যান ফেরে ।পাশের টুনিকে দেখে হাত বাড়িয়ে মেয়েকে কোলে টেনে নিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলো।

পুর্ব অভিজ্ঞঁতা থেকে নাজু বুঝতে পেরেছে সে আবার মা হতে চলেছে ।কয়েকদিন ধরেই শরীরের পরিবর্তন টের পাচ্ছিলো।আজ নিশ্চিত হলো।কিন্তু দু'চোখে কেবলি অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে।

সারা রাত নাজু ভাবলো ।টুনিকে সে একাই মানুষ করবে।মজিদকে  সে আর কোনদিন ঠাঁই দেবে না।
রাত পোহালে নাজু ছুটল মেডামের বাসায় ।মেডামের সঙ্গে পরামর্শ করে নাজু পরের সিদ্ধান্ত নেবে।

নাজু সিদ্ধান্ত নেয় আর কোন ভুল নয় ।কিন্তু অলক্ষ্যে থেকে নিয়তি হেসে উঠে ।নাজু্দের জীবনের ঝড় কখনও শেষ হয় না।

উপরে